ছাত্রলীগ গৌরবের ৭৩ বছরে বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা সংগঠন সাজাতে: রাইয়ান , নতুন খবর |

আজ ৪ জানুয়ারি। বাংলাদেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রামে বলিষ্ঠ নেতৃত্বদানকারী ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
বাংলা, বাঙালির স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্ম হয়। উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও প্রচীন ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭৩তম বার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
৭৩ বছরে পদার্পণের উদযাপন উপলক্ষে ছাত্রলীগ সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রতিবার বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন করা হলেও এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উদযাপনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। পরিবর্তন এসেছে কর্মসূচিতেও।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচির বিষয়ে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিবার বড় পরিসরে রাজধানীতে র্যালি আয়োজন করা হলেও এবার র্যালি হবে না। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন সকাল সাড়ে সাতটায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ও দেশব্যাপী সংগঠনের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৮টায় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, সকাল ৯টায় ঢাবির কার্জন হল প্রাঙ্গণে কেক কাটা, সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের প্রতিনিধি টিম কর্তৃক শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেবে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কর্মসূচি উদ্বোধন করা হবে বিকেল সাড়ে তিনটায়। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে গণভবন থেকে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ছাত্রলীগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রতিটি জেলা, মহানগর ও উপজেলার দলীয় কার্যালয়ে প্রজেক্টর এবং সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু কন্যার ছাত্র সমাজের উদ্দেশ্যে মূল্যবান ভাষণ সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করবে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অন্তর্গত জেলা, মহানগর এবং সব উপজেলার নেতাকর্মীকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত থেকে ছাত্রলীগের আলোচনা সভায় সংযুক্ত হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
এছাড়া বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে সকাল ১১ টায় দুস্থদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ, ৮ জানুয়ারি ঢাবির অপরাজেয় বাংলা সংলগ্ন বটতলায় স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালন করা হবে। এসব কর্মসূচি সব ইউনিটে সুবিধাজনক সময়ে পালন করতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দেয়াল লিখন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির দেয়ালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রাফিতিতে রং করা হয়েছে।
নতুন বছরে ছাত্রলীগের পরিকল্পনার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তানজিদুল ইসলাম শিমুল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নতুন বছরে নতুন উদ্যমে ছাত্রলীগকে ঢেলে সাজানো হবে। এলক্ষ্যে সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে আমরা সবাই কাজ করে যাচ্ছি।’
ছাত্রলীগ বরাবরই ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল উল্লেখ করে এ ছাত্রনেতা বলেন, ‘এখন আমরা যুযোপযোগী বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা করছি। কওমি মাদ্রাসাসহ সকলস্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কাজ করছি।’
৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গৌরব গাঁথা ইতিহাসকে সমুন্নত রাখতে ও জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।’
ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি এই করোনার মধ্যেও ছাত্রলীগ সামাজিক কাজ করে প্রশংসা কুঁড়িয়েছে। আমরা সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমি আমার সংগঠনের পক্ষ থেকে সবাইকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানাচ্ছি৷’
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ৫৮’র আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ৬ দফার পক্ষে গণঅংশগ্রহণের মাধ্যমে মুক্তির সনদ হিসেবে এই দাবিকে প্রতিষ্ঠা করে। এরপর ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনা, ৭০’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়লাভ এবং ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পরাধীন বাংলায় লাল সবুজের পতাকার বিজয় ছিনিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অংশ নেয় ছাত্রলীগ। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) দেশে ফিরে স্বাধীনতার চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক ধারা পুনরুদ্ধারে আন্দোলনের সূচনা করেন।
ছাত্রলীগ ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনন্য ভূমিকা পালন করে। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার নীলনকশার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম রাজপথে প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে ছাত্রলীগ, ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
শিক্ষার্থীদের সকল যৌক্তিক দাবির সঙ্গে সম্পৃক্ত রেখে, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে, মাদরাসা, কওমি মাদরাসাসহ সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ পৌঁছে দিয়ে, দেশ ও বিদেশের সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে বরাবরের মতো অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করবে এমনটিই প্রত্যাশা।
নতুন খবর//তুম